top of page

Bagha Jatin (Bangla Version)

The Bengali version is a translation of the English version with guidance and input from Sri Prithwindra Mukherjee, Padmashree, grandson of Bagha Jatin, a great and worthy scholar in French and English, who has written several works, including Life and Times of Bagha Jatin, and has contributed immensely toward Info-French cultural bonding.  We express our deep reverance and gratitude to the great scholar for his help, active and untiring support, and endeavour for bringing to light the immense contribution of Bagha Jatin to the Indian freedom movement. 

Jatin_Poem_Nazrul_1.jpg
Jatin_Poem_Nazrul_2.jpg
Jatin_Poem_Nazrul_3.jpg

   বাঘা যতীন - ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় 
-শান্তনু দে ও পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখার্জী

 
"ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়"


বাঘা যতীন ছিলেন ভারতীয় বিপ্লবীদের মুকুটহীন সম্রাট। শ্রীঅরবিন্দের জ্ঞাতিভাই প্রবীণ সাংবাদিক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, যিনি বন্দেমাতরম পত্রিকার  পরিচালনায়  শ্রী অরবিন্দর সহযোগী ছিলেন,  লিখে গিয়েছেন যে যতীন মুখার্জি (বাঘা যতীন ) ১৯০৩ সাল থেকে ১৯১৫ সাল অবধি বাংলার তথা ভারতের বিপ্লব যজ্ঞের অন্যতম মূল পরিচালক ছিলেন । বুড়িবালামের বিখ্যাত ট্রেঞ্চ যুদ্ধের পর তাঁর জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি যে সুমহান কীর্তি রেখে গিয়েছেন এবং রচনা করেছেন এক অভূতপূর্ব ইতিহাস, তা সাধারণ মানুষের কাছে অকল্পনীয় এবং দুঃসাধ্য। তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের মধ্যে স্বীকৃত পায় Rodda কোম্পানী-র অস্ত্র লুন্ঠন, আশুতোষ বিশ্বাস ও সামসুল আলম  নিধন, এবং সেনা বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ইন্দো-জার্মান সহযোগিতা পরিকল্পনার মতো অজস্র আক্রমণ যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি নড়িয়ে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যাপকভাবে সন্ত্রস্ত করেছিল। বাঘা যতীন দক্ষ সংঘটকই শুধু ছিলেননা, তিনি ছিলেন এক বিরাট মাপের অনুপ্রেরণা দায়ক নেতা। তিনি বহু তরুণ ও যুবক বিপ্লবীকে আদর্শ দেশপ্রেমের শিখিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে ছিলেন রাসবিহারী বসু, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, অতুলকৃষ্ণ ঘোষ,  চারুচন্দ্র বোস, চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত, ফণী চক্রবর্তী, বীরেন দত্তগুপ্তের মতো অজস্র স্বনামধন্য বিপ্লবী। তাঁর পরিকল্পনা ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯০৬ সাল থেকে তিনি জাঠ রেজিমেন্ট-এর বিদ্রোহ সম্পন্ন করে সেনাবাহিনীকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা শুধু দুঃসাহসিকই নয়, এক অসামান্য ধীশক্তির পরিচয়বাহক। তিনি ১৯১৪ সালের বিরাট বিশ্বব্যাপী যে বিপ্লবের সূচনা ও পরিকল্পনা হয়েছিল তার উদ্ভাবনা করেছিলেন। হাওড়া "ষড়যন্ত্র" মামলায় যদিও তিনি  গ্রেফতার হয়েছিলেন কিন্তু প্রমাণাভাবে  একবছর জেল-এ থাকবার পর ছাড়া পেয়ে নজরবন্দী ছিলেন। সেই অবস্থায়, ১৯১২ সালে ভারত পরিদর্শনরত জার্মান যুবরাজ কলকাতায় এলে সুকৌশলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাঘা যতীন তাঁকে জানান যে সৈন্য-বাহিনীর সহযোগিতায় একটি বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে তিনি ব্রিটিশ আধিপত্য উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর। উৎফুল্ল যুবরাজ যতীন্দ্রকে প্রতিশ্রুতি দিলেন জার্মানি যে এই প্রচেষ্টা সমর্থনে আগ্রহী তা তিনি অস্ত্র ও অর্থ পাঠিয়ে প্রমাণ করবেন । বাঘা যতীন জাহাজ ভর্তি অস্ত্র এনে ভারতের মধ্যে সশস্ত্র আন্দোলনের বিরাট পরিকল্পনা করেছিলেন কিন্তু মাভেরিক নামক সেই জাহাজটি আটক হওয়াতে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে উঠতে পারেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ও তাঁর চার অনুগামী চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, নীরেন দাশগুপ্ত, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত, এবং জ্যোতিষ পাল  আত্মবলিদান দিয়ে দেশকে জাগানোর মন্ত্র শিখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দেশবাসীরই একাংশ তাঁদের ধরিয়ে দিতে পেছপা হয় নি। ১৯১৫ সালের ৯-ই সেপ্টেম্বর বুড়িবালাম এর তীরে সশস্ত্র ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধের পর, ১০-ই সেপ্টেম্বর এই অসমসাহসী মহাবীর দেশপ্রেমিক ও দেশের গৌরব প্রাণত্যাগ করেন। তিনি তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন, "আমরা মরবো,  জাত জাগবে।" Nation অর্থে  তিনি ‘জাত’ শব্দটি  ব্যবহার করতেন। পরাধীন, আত্মবিলুপ্ত, ব্রিটিশ পদলেহী এবং আপন ঐতিহ্য ভুলে যাওয়া একটা জাতকে তিনি জাগাতে চেয়ে এই প্রমাণ করেছিলেন যে ইংরেজ শাসন অমর নয়, অপরাজেয় তো নয়-ই। একটু চেষ্টা করলেই তাদের সমগ্র শেকড় উপড়ে বঙ্গোপসাগরের জলে ছুঁড়ে ফেলা যায়। শুধু তার জন্য চাই অগাধ দেশপ্রেম, অসীম সাহস ও মনোবল, এবং কঠিন ত্যাগের ব্রত।

“হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছো অপমান”


ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনকে রাজনৈতিক ঐতিহাসিকরা এক অহিংসবাদী ক্লীব মূলক আন্দোলন এ রূপান্তরিত করে আবেদন নিবেদন এর রাজনীতি কে প্রাধান্য দিয়ে মহান আত্মত্যাগের কাহিনীগুলি ধামাচাপা দিয়ে অথবা বিকৃত করে পরিবেশন করেছেন জাতির কাছে। এটি একটি অমার্জনীয় অপরাধ। এই অপরাধের ফলে বহু জ্ঞেয় ও অজ্ঞেয় মানুষের অবদান আজও স্বীকৃতি পায়নি, যার পরিণামে দেশের তরুণ সমাজ আজ আদর্শ বিবর্জিত, এবং বিদেশী পণ্য ও সংস্কৃতির মোহে পতিত। এই পরাধীন জাতির কিছু নেতা ছিলেন যাঁরা কোনোদিন আপস করেননি। তার জন্য তাঁদের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল, কিন্তু তবু তাঁরা পিছপা হননি। কারণ তাঁরা জানতেন এবং শুনেছিলেন সেই অমোঘ বাণী, "হতঃ বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গম, জিত্বা বা ভক্ষসে মহীম।" তাঁরা "সুখে দুঃখে সমে কৃত্বা" হয়েই লাভ অলাভ এবং জয় পরাজয়ের উর্ধ্বে উঠে কঠিন সংগ্রাম চালিয়েছিলেন, যার পরিণতিতে তাঁদের দিতে হয়েছিল আত্মবলিদান। অনেক সময়ে নিজেদের দেশবাসীর কাছেই জুটেছিল লাঞ্ছনা ও অত্যাচার। তাঁরা কি আজ পেয়েছেন তাঁদের প্রাপ্য? যাঁরা কোনোদিন কিছু চাননি, শুধু নিঃশেষে নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে গেছেন, সেই বরেণ্য দেশনেতাদের অন্যতম ছিলেন বাঘা যতীন, যিনি সর্ব অর্থেই গীতোক্ত স্থিতপ্রজ্ঞ মহাপুরুষ। ফরাসি দার্শনিক Raymond Aron বলেছেন যে যতীন্দ্র ছিলেন একজন চিন্তাবিদ ও কর্মযোগী যিনি কর্ম ও চিন্তার সামঞ্জস্য ঘটিয়ে ইতিহাসের একটি "মিসিং লিংক উদ্ঘাটিত করেন।" আমেরিকান রস হেডভিশেক বলেছেন যে যদি ই. ভি ভস্কা নামের চেক গুপ্তচরটির কোনো ভূমিকা না থাকতো, ইতিহাসের পাতায় আজ গান্ধীর বদলে বাঘা যতীন হতেন ভারতের "ফাদার অফ দি নেশন।" যতীন্দ্রের পরিকল্পনা সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিতে পারত। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পরিণতি হতো অন্য। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পতন ত্রিশ বছর আগেই হতো।  শুধু ক্ষোভের বিষয় এই যে গান্ধীজি যাঁকে ১৯২৫ সালে "দৈবী মানুষ" আখ্যা দিয়েছিলেন, তথাকথিত গান্ধী অনুগামীদের কাছে সেই যতীন্দ্র ব্রাত্য হয়েই রইলেন। তাঁর সমগ্র জীবন ও বিরাট কার্য্যের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণীর মাধ্যমে এই মহামানবের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। চার্লস টেগার্ট, কলকাতার ব্রিটিশ পুলিশ কমিশনার, যতীন্দ্রর সঙ্গে চাষাখণ্ডের যুদ্ধের পর টুপি খুলে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে যতীন্দ্র যদি ইংরেজ হতেন, ট্রাফালগার স্কোয়ারে নেলসন এর মূর্তির পাশে তাঁর প্রতিকৃতি রাখা হতো। অথচ ভারতের তথাকথিত কিছু ইতিহাসবিদ তাঁর যোগ্য মূল্যায়ন করেননি । ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে ঊজ্জ্বল ও গৌরবময় স্থান তাঁর প্রাপ্য, তা হতে তাঁকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের জাতীয় নেতৃত্ববৃন্দ স্বল্প সংখ্যক কিছু অহিংসাবাদী জাতীয়দাবাদী নেতা ছাড়া অন্যদের যথাযোগ্য সম্মান দেবার হয়তো প্রয়োজন বোধ করেননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে যতীন্দ্রর মত মহাবিপ্লবীদের শুধুমাত্র সহিংসক বিপ্লববাদের পন্থা অবলম্বনকারী হিসেবে পরিচিতি। তাই তাঁদের ইতিহাসের বইতে স্থান পাওয়াটা এইসব ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দাক্ষিণ্যের ওপরে নির্ভরশীল।

“মৃত্যুহীন প্রাণ”


কিন্তু ইতিহাসবিদরা ও রাজনৈতিক নেতারা তাঁকে উপেক্ষা করলেও ভারতীয় জনমানসে তাঁর প্রভাব এখনো অপরিসীম। হয়তো সময় হয়েছে তাঁর কথা আরো বেশি করে প্রচার করবার, যাতে যুবসমাজ তাদের আদর্শ কে চিনতে পারে এবং অনুসরণ করতে পারে। যতীন্দ্র ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন যার ওপরে পরবর্তীকালের দেশনেতা ও দেশনায়কেরা তাঁদের বিভিন্ন আদর্শ ও মত অনুযায়ী দেশমুক্তির ইমারত গড়ে তুলেছিলেন। যতীন্দ্র এবং তাঁর সহযোগী বিপ্লবীদের কর্ম ও পরিকল্পনা আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ মনে হলেও, বাস্তবে তা এক বিরাট সম্ভাবনার স্থাপনা করেছিল। দেশবাসী সবিস্ময়ে এক বিশাল মহাশক্তির উত্থান লক্ষ্য করলো, যাঁর কার্যকলাপ শুধুমাত্র ভারতে সীমাবদ্ধ না থেকে সারা বিশ্বে চেতনা বিস্তারে সাহায্য করেছিল। এরই পরিণতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইন্দো-জার্মান সহযোগিতা, গদর পার্টির অভ্যুত্থান, ১৯১৪-র বিপ্লব এবং পরিশেষে পাঁচ বাঙালি যুবকের বিরাট ইংরেজ সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে মৃত্যুপণ সশস্ত্র সংগ্রাম। হতাশা নয়, বিফলতা নয়, ১৮৫৭-র পর এই প্রথম উজ্জীবিত হলো ভারতবর্ষ, তৈরী হলো বিপ্লবের, সশস্ত্র যুদ্ধের, মজবুদ ভিত্তি। এই আদর্শ ও কর্মের প্রতিফলন পরবর্তীকালে পাওয়া গেছে  বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠনের ব্রিটিশ রাজত্বের ভিত্তি নাড়িয়ে দেওয়ার নিরন্তর প্ৰচেষ্টায়। হিন্দুস্থান রিপাবলিকান আর্মির সুযোগ্য সৈনিক রামপ্রসাদ বিসমিল, আশফাকুল্লা, ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, যতীন দাস, বটুকেশ্বর দত্ত, শুকদেব, রাজগুরু, রাজেন লাহিড়ী দেশকে উজ্জীবিত করতে তাঁদের জীবন দান করে গেছেন। বাংলার দুর্ধর্ষ বিপ্লবী সংস্থা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এবং তার দামাল যোদ্ধারা - বিনয় কৃষ্ণ বসু , বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত, প্রদ্যোত ভট্টাচার্য, অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন দত্ত, নির্মলজীবন ও জ্যোতিজীবন ঘোষ, বিমল দাশগুপ্ত, কানাই ভট্টাচার্য এবং আরো অনেকে অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের মেরে বা মারবার চেষ্টা করে দেশবাসীর অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে মাষ্টারদা সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার, নির্মল সেন, প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দার, লোকনাথ বল, অনন্ত সিংহ, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের হার-না-মানা মরণপণ জেদ শাসকশ্রেণী এবং তাদের স্তাবক বশংবদদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাদের ওপর চরম আঘাত হানার এবং পরিণতিতে মৃত্যুবরণ করবার  আদর্শ ধরে রেখেছিলেন ভবানী ভট্টাচার্য, অনুজা চরণ সেন, দীনেশ মজুমদার, ও অনন্তহরি মিত্র। বীনা দাস, লীলা নাগ, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, উজ্জ্বলা মজুমদার, সুহাসিনী গাঙ্গুলী, জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী এবং আরো অনেক নাম না জানা দেশপ্রেমী নারী এগিয়ে আসেন মুক্তিযুদ্ধে। পরিশেষে দেশনায়ক সুভাষ চন্দ্র বসুর দেশের বাইরে গিয়ে সৈন্য সংঘঠিত করে বৃটিশ রাজত্ব কে মরণান্তক আঘাত দেওয়ার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন ঘটে। এইসব ঘটনাবলীর মধ্যেও প্রচ্ছন্ন ভাবে নিহিত ছিলেন বাঘা যতীন। তাঁর বিরাট ছায়া যুগান্তর - যাদুগোপাল - হেমচন্দ্র - ভূপেন্দ্রনাথ - শচীন্দ্র সান্যাল - রাসবিহারী বসুর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বিপ্লব শক্তিকে সাহস, শক্তি, এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।  তাঁর পরিকল্পনায়  অপহৃত Rodda কোম্পানির মাউসার পিস্তলের দ্বারা নিহত হয়েছিল Saunders-এর মত অত্যাচারী পুলিশ অফিসার এবং লুঠ হয়েছিল কাকোরির ট্রেনে ব্রিটিশ সরকারের অর্থ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের তাঁর দুঃসাহসিক পরিকল্পনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রাসবিহারী  ও সুভাষ চন্দ্রের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়, যার পরিণতি ব্রিটিশ সরকারের পতন। তাই বাঘা যতীন ব্যর্থ হননি, তিনি ভারতের ভাগ্য গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।

“বঙ্গ তার গঙ্গোদকে অভিষিক্ত করি নিলো চুপে চুপে
পোহালে শর্বরী বণিকের মানদণ্ড দেখা দিলো রাজদণ্ড রূপে”


স্বামী বিবেকানন্দের সিংহনাদ সত্ত্বেও ভারত কিন্তু তার "পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, দাসসুলভ দুর্বলতা" সহজে দূর করতে পারেনি। 
ভারতের মধ্যে ইংরেজদের বশ্যতা স্বীকারকারী, তাদের সাহায্যকারী, এবং ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য দেশের অহিতকারী মানুষের অভাব ছিলনা। পুলিশের ও  প্রশাসনের মধ্যেও যেমন ইংরেজ প্রভুদের গোলামরা ছিল, যারা নানাভাবে স্বাধীনতা পাগল যুবকদের যুবতীদের নিপীড়িত নির্যাতিত করে সামান্য কিছু প্রাপ্তির লোভে তাদের নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পেছপা হতোনা, তেমনি  কিছু হতবীর্য্য, হৃতবল, ক্লীবে পরিণত হওয়া দেশের মানুষ ছিল যারা আশা ও উদ্যম দুই-ই হারিয়ে, সমস্ত আত্মবিশ্বাস জলাঞ্জলি দিয়ে, বিপ্লবীদের বিভিন্ন ভাবে বিরোধিতা করতো। তাদের মধ্যে ছিলেন তথাকথিত দেশপ্রেমিকরাও, যাঁরা রাজরোষের ভয়ে অথবা নিজেদের স্বার্থে নরমপন্থাতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং চরমপন্থার মার্গকে পরিহার করে চলতেন। ইংরেজের চাটুকারী, বশংবদ, ও গুপ্তচরের দল সর্বত্র ইংরেজদের সাহায্য করে নিজেদের কৃতার্থ বোধ করতো। সামান্য টাকার জন্য দেশের মানুষকে বিকিয়ে দিতে তাদের বিবেকে বাধতোনা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলেও বশংবদদের ভরণপোষণে কোনো ত্রুটি রাখেনি। এই বশংবদ পুলিশ, গুপ্তচর, রাজকর্মচারী, আমলা, এবং ভাড়াটে সৈন্যবাহিনীর নেটওয়ার্কের সাহায্যে ব্রিটিশরা তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছিলো। বাংলার দামাল বিপ্লবীরাও এই নেটওয়ার্ককে ভাঙবার জন্য এবং সরকারি আমলাদের অত্যাচার রুখবার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন। অরবিন্দ-বারীন্দ্রের পর এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাঘা যতীন। আঘাতের পর আঘাত হেনে তিনি বাংলায় ইংরেজ শাসনের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন, যার পরিণতিতে ইংরেজ বাধ্য হয়েছিল রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত করতে।

bottom of page