top of page

Bagha Jatin (Bangla Version)

The Bengali version is a translation of the English version with guidance and input from Sri Prithwindra Mukherjee, Padmashree, grandson of Bagha Jatin, a great and worthy scholar in French and English, who has written several works, including Life and Times of Bagha Jatin, and has contributed immensely toward Info-French cultural bonding.  We express our deep reverance and gratitude to the great scholar for his help, active and untiring support, and endeavour for bringing to light the immense contribution of Bagha Jatin to the Indian freedom movement. 

   বাঘা যতীন - ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় 
-শান্তনু দে ও পৃথ্বী
ন্দ্রনাথ মুখার্জী
 
Chapter 3

“আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি”

ভারতীয় বিপ্লবীদের আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সঙ্গে যোগসাজশের ওপরে প্রথম রিপোর্ট Nixon’s Report on Revolutionary Organisation। এতে বলা হয়েছিল যে ১৯১২ সালে জার্মানির যুবরাজ যখন কলকাতা আসেন বাঘা যতীন এবং তাঁর সঙ্গী নরেন ভট্টাচার্য তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা তাঁদের কাজের জন্য জার্মানির কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র সহ সমস্তরকম সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছিলেন। যতীন্দ্র যখন জেলার কাজ দেখছিলেন, কলকাতার কাজ তিনি তাঁর "ডান হাত" অতুলকৃষ্ণ ঘোষের ওপরে ছেড়ে দিয়েছিলেন। শশীভূষণ দার মাধ্যমে ছাত্রদের ওপরে তাঁর প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। এই ছাত্রদের অন্যতম ছিলেন ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত, যিনি বালক সুভাষ চন্দ্র বসুর বাঘা যতীন গীতোক্ত মুক্ত পুরুষ কিনা, প্রশ্নর উত্তরে বলেছিলেন যে তিনি (যতীন) গীতার মূর্ত রূপ। বাঘা যতীন যুবকদের মধ্যে মিলিটারি নিয়মকানুনের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। অনুশীলন সমিতির প্রথম দিকের একজন নামজাদা বিপ্লবী তারকনাথ দাস প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকাতে হিন্দু জার্মান ষড়যন্ত্রের একজন রূপকার ছিলেন। বাঘা যতীন সম্পর্কে তারকনাথ বলেছিলেন যে তাঁর সৈন্যবাহিনীর মতো নিয়ম ও শৃঙ্খলা অনুবর্তিতা বাংলার বিপ্লবীদের অনেক সাহায্য করেছিল। বাঘা যতীন ছিলেন পরিকল্পনা করবার এবং তার বাস্তবায়নের একজন দক্ষ ও কুশলী নায়ক। রাসবিহারী বসুর কর্মকাণ্ডের জন্য টাকার প্রয়োজন হলে যতীন ট্যাক্সিক্যাব ডাকাতির মাধ্যমে সেই প্রয়োজন মেটান। এই ধরণের কাজের নেপথ্যে ছিল হার্ডিঞ্জকে মারবার ব্যর্থতার এবং পুলিশি ধরপাকড়ের ফলে বাংলার বিপ্লবীদের মধ্যে যে নৈরাশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল, তার নিরসন ঘটানোর। এই ধরণের ডাকাতির নৈতিক অবদান সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতেই পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে যে এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল সৎ এবং নিঃস্বার্থ। কোনো বিপ্লবীই ব্যক্তিগত ভাবে এই ডাকাতিগুলোর থেকে লাভবান হননি বা কোনোরকম দাবী রাখেননি। সমস্ত সংগৃহিত টাকাই অস্ত্রশস্ত্র কেনবার বা অন্যান্য পরিকল্পনা সংক্রান্ত কাজে লাগানো হয়েছিল। ধনগোপাল মুখার্জী, যিনি আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন, লিখেছিলেন, "১৯১৪-র আগে আমরা (ব্রিটিশ) সরকারের মানসিক ভারসাম্য খর্ব করতে যথেষ্ট সফল হয়েছিলাম। তারপরে সরকার পুলিশকে অপরিসীম ক্ষমতা দিলো। পুলিশ আমাদের সন্ত্রাসবাদী চিহ্নিত করে সমগ্র জগতের সামনে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করলো। যতীন, আমাদের তুতো ভাই, তাকে কি মনে আছে ? যে একটি মাত্র ছুরির সাহায্যে এক কেঁদো বাঘকে ঘায়েল করেছিল? নিজের বাম হাতের কনুই বাঘের মুখে ঢুকিয়ে ডান হাতে ছুরি নিয়ে বাঘের চোখের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে তাকে মেরেছিলো ? যতীন একজন মস্ত বড়মাপের মানুষ, আমাদের প্রথম নেতা। সে একটানা দশদিন ঈশ্বরচিন্তায় কাটাতে পারতো। কিন্তু সরকার যখন জানতে পারলো যে যতীনই আমাদের নেতা, তাকে ধরতে তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করলো। পরিশেষে সে ধরা পড়লো এবং মৃত্যবরণ করলো। "

“বার্নহারডি”

কারা জীবনের শেষের দিকে যতীন Friedrich von Bernhardi (১৮৪৯ - ১৯৩০) জার্মানির পরবর্তী যুদ্ধ (Germany and the Next War) নামে একটি অসাধারণ বই-এর কিছু অনুচ্ছেদ পড়েন। বার্নহারডি লেখক হিসেবে অত্যন্ত বিচক্ষণ ছিলেন।  তিনি বুঝেছিলেন যে পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ড ঘোরতর বিপদের সম্মুখীন হবে।  ভারত ও ইজিপ্টের এবং অন্যান্য উপনিবেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম  সেই বিপদের মূল কারণ। তিনি বলেছিলেন যে  যেহেতু বাংলায় বৈপ্লবিক ও জাতীয়তাবাদী  হিন্দু শক্তির অভ্যুত্থান ঘটেছে, মৌলবাদী মুসলমানরা  তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইসলামীয় অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে। 

"যতীনকে অনুসরণ করো"

বাঘা যতীন শুধু একজন বিপ্লবীই ছিলেননা, তিনি ছিলেন স্বামীজীর আদর্শের একজন প্রধান রূপকার। তাই তিনি যখনই সুযোগ পেতেন, সেবাযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়তেন এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। দুর্ভিক্ষ, বন্যা, মহামারীতে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে ত্রাণকার্যে রত ছিলেন। রামকৃষ্ণ সংঘ জননী মা সারদার প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাবান এবং শেষ কাজের জন্য যাওয়ার আগে ট্রেনে উঠে লুকিয়ে তিনি শ্রীমাকে প্রণাম করে আসেন। ঘোমটা সরিয়ে শ্রীমা তাঁকে দেখেছিলেন এবং আশীর্ব্বাদ করেছিলেন। "কি দেখলেন?" সঙ্গিনীর এই প্রশ্নের উত্তরে মা বলেন, "দেখলাম  যেন জ্বলন্ত আগুন।" তিনি রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের বিভিন্ন সেবামূলক ও আধ্যাত্মিক কাজের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত রেখেছিলেন।  তৎকালীন পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট তাঁর রিপোর্টে বলেছিলেন যে এইসব কাজের মধ্য দিয়ে বিপ্লবীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা সম্বন্ধে একে অপরকে অবহিত করতেন। বাঘা যতীন এই সেবা মূলক কাজকে অন্য বিপ্লবী সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবার প্রয়োজনেও ব্যবহার করতেন। এই কাজের মধ্য দিয়ে তাঁকে অনেক জায়গায় যেতে হতো এবং এইভাবেই তিনি বিভিন্ন জায়গার সংগঠনগুলিকে পরিপক্ক করতেন। তাদের কাজের জন্য তৈরী করে দিতেন এবং তাদের নেতাদের একের অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবার বন্দোবস্ত করে দিতেন। ১৯১৩ সালে যখন দামোদরের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়, যতীন এবং তাঁর সঙ্গীরা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই সঙ্গীদের মধ্যে যাদুগোপাল মুখার্জী সেই সময় যতীনের খুবই ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন। যতীনের পরবর্তী অধ্যায়ে তিনি অনুশীলন সমিতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। বাঘা যতীন বাংলা, বিহার, ওড়িষ্যা, ও আসামের বিপ্লবী সংস্থানগুলোর ও তাদের কাজকর্মের অবিসংবাদী অধিনায়ক ছিলেন। বরিশালের সতীশচন্দ্র মুখার্জী, নোয়াখালীর সত্যেন্দ্রচন্দ্র মিত্র, আত্মোন্নতি সমিতির বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি, অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী, অতুলকৃষ্ণ ঘোষ প্রমুখ নামজাদা বিপ্লবীরা বাঘা যতীনকে তাঁদের নেতা বলে মেনে নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্যমূলক আক্রমণে সরকারি কিছু কর্মী নিহত হন, কিন্তু পুলিশ কোনোভাবেই বাঘা যতীনকে এইসব আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়নি। যদিও তাদের সন্দেহ বরাবরই ছিল যে যতীনই হচ্ছেন মুখ্য সঞ্চালক। ঢাকা অনুশীলন সমিতির পুলিনবিহারী দাস যখন মুসলিমদের অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত না করবার নির্দেশ দেন যতীনের পরিকল্পনার সঙ্গে তাঁদের কাজের সামঞ্জস্য নষ্ট হয়। তার প্রতিবাদে শচীন্দ্রনাথ সান্যাল দল ছাড়েন। তিনি রাসবিহারী বোসের সঙ্গে মিলে কাজ করতে থাকেন। রাসবিহারী যতীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতের উর্দ্ধভাগের বিপ্লবকার্য্য পরিচালনার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯১৩ সালের পর রাসবিহারী যতীনের সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। এর আগে যতীনের বন্ধু শশীভূষণ রায়চৌধুরীর সহায়তায় তিনি আলীপুরের বোমার মামলা থেকে দূরে থাকতে পেরেছিলেন। যদিও ক্যাম্পবেল-কার এর রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি ১৯০৮ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে পুলিশের কোনো সন্দেহের তালিকাতে ছিলেননা। অমরেন্দ্রর এবং চন্দননগরের বিপ্লবীদের সাহায্যে তিনি বসন্ত বিশ্বাসের মাধ্যমে রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত হওয়া উৎসব চলাকালীন হার্ডিঞ্জের ওপরে বোমা নিক্ষেপ করেন। এর ফলে বসন্ত বালমুকুন্দ, এবং অবধবেহারী সমেত অন্যান্য রাসবিহারী অনুগামীরা ধরা পড়েন এবং তাঁদের ফাঁসী হয়। যতীনের কার্যকলাপ এবং দক্ষতায় মুগ্ধ হলেন রাসবিহারী। বিশেষ করে যেভাবে যতীন বিভিন্ন বিপ্লবী সংস্থাগুলিকে একজোট করে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাতে রাসবিহারী যতীনের নেতৃত্বের কুশলতার  পরিচয় পান। অমরেন্দ্রর প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি রাসবিহারী বোসকে (হার্ডিঞ্জের ওপরে আক্রমণ এবং তার পরবর্তী পর্যায়ে) সাময়িকভাবে ভগ্নমনোরথ ও মূল বিপ্লবধারা থেকে বিচ্ছিন্ন দেখে যতীনের কাছে তাঁকে নিয়ে আসেন। যাদুগোপাল, উমা মুখার্জী এবং অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায় যে রিলিফ ক্যাম্পে যতীনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর রাসবিহারীর মধ্যে নতুন করে উদ্যম দেখা যায়। বাঘা যতীন তাঁর বিপ্লবী হৃদয়ে নতুন আশার আলো ও অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন, যার ফলে রাসবিহারী যতীনকে মানুষের এক সত্যিকারের নেতা হিসেবে দেখতে শুরু করেন, যা ছিল যতীন সম্বন্ধে সিস্টার নিবেদিতারও অভিমত। একদিন কথাপ্রসঙ্গে যতীন রাসবিহারী বোসকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করবার জন্য চেষ্টা করতে পারবেন কিনা। এই দুর্জয় সাহসিক পরিকল্পনার কথা শুনে রাসবিহারী হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি মানসা সিং বলে জনৈক সৈন্যাধ্যক্ষর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি, তার কারণ মানসা ছিলো রাজসরকারের অনুগত। বাঘা যতীনের কিন্তু লোক চিনতে ভুল হয়নি। জাঠ রেজিমেন্টের যাঁদের সঙ্গে তিনি ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাঁরা শেষ পর্যন্ত তাঁর সম্পূর্ণ অনুগত ও বিশ্বাসী ছিলেন। যতীনের নেতৃত্ব মানবার নৈতিক অনুমোদন পাওয়ার জন্য রাসবিহারী চন্দননগর প্রবর্তক সঙ্ঘের মতিলাল রায়কে শ্রী অরবিন্দর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর নির্দেশ জানবার জন্য অনুরোধ করেন। পন্ডিচেরী রওয়ানা হওয়ার আগে অরবিন্দ মতিলালকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যতীনকে অনুসরণ করবার জন্য। এ তথ্য রাসবিহারীর অজানা ছিল না। শ্রী অরবিন্দর পূর্ণ অনুমোদন নিয়ে মতিলাল পন্ডিচেরী থেকে ১৯১৩ সালে ফিরলেন। মতিলালের বন্ধু এক কালের প্রখ্যাত বোমা বিশারদ মনীন্দ্র নায়ক বলেছিলেন যে অরবিন্দ মতিলালকে আবার নির্দেশ দিলেন, "যতীনকে অনুসরণ করো।"


শ্রী পৃথ্বীন্দ্র মুখার্জী অতুলকৃষ্ণ ঘোষের কাছে ১৯৬৩ সালে একটি ঘটনার কথা শোনেন। এই ঘটনায় অরবিন্দর বাঘা যতীনের ওপর বিশ্বাস এবং অরবিন্দকে পুলিশি নজর থেকে বাঁচানোর জন্য যতীনের আপ্রাণ চেষ্টা এবং তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাঘা যতীন জার্মানির প্রতিশ্রুতির ওপরে ভরসা করে বিপ্লবের পরিকল্পনা করছিলেন। শ্রী অরবিন্দর দ্বারা নির্দেশিত হয়ে নলিনীকান্ত গুপ্ত, সৌরেন বোস এবং সুরেশ চক্রবর্তী (মণি) যতীনকে অরবিন্দর বার্তা দেওয়ার জন্য অমরেন্দ্র চ্যাটার্জীর সমবায় সমিতিতে গিয়েছিলেন। বাঘা যতীনকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে সৌরেন উৎসাহিত হয়ে বলে ফেলেন, "দাদা, শ্রী অরবিন্দ আপনাকে যুদ্ধের সুযোগে কিছু করবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।" যতীন দেখলেন যে ছেলেগুলির পেছনে সি আই ডি পুলিশ সাদা পোশাকে তাদের ওপরে নজর রাখছে। তিনি ছদ্ম রাগে চিৎকার করে বলে উঠলেন, " অরবিন্দ ঘোষ কে গিয়ে বলো যে বাংলায় যতীন মুখার্জী আর কারো উপদেশের তোয়াক্কা করেনা।" যতীনের সেই উঁচুগলার আওয়াজ পেয়ে এবং শ্রী অরবিন্দর প্রতি এই অশ্রদ্ধাপূর্ণ কথা শুনে অতুলকৃষ্ণ তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসেন এবং সমস্ত ঘটনা বুঝতে পারেন।

“জাগো দশপ্রহরণধারিণী অভয়া শক্তির বলপ্রদায়িনী”

বাংলায় নারীবিপ্লববাদের প্রচলন ঘটান সম্ভবতঃ সরলা দেবী চৌধুরানী বা সরলা ঘোষাল, যিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী এবং জানকীনাথ ঘোষালের কন্যা। ওকাকুরা এবং নিবেদিতার মতোই ভারতী পত্রিকার সম্পাদিকা সরলা এশিয়ার প্রাধান্যের স্বপ্ন দেখেন। তিনি বাংলায় যুবকদের মধ্যে বীরত্বব্যাঞ্জকতা আনবার জন্য লাঠিখেলা শেখার আখড়া খুলেছিলেন এবং ঘুষির বদলে ইংরেজদের ঘুষি মারবার আহবান জানান। জাতীয়তাবোধ জাগানোর জন্য তিনি প্রতাপাদিত্য উৎসব চালু করেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রকাশ্য বিপ্লবের কাজ করেননি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যুবসমাজকে লড়াইয়ের জন্য তৈরী করা, ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বিনোদবালা দেবী ছিলেন যতীনের বড়ো দিদি। তাঁকে যতীনের অনুগামী বিপ্লবীরা দেবী রূপে দেখতেন। নিখিলেশ্বর মৌলিক (স্বামী ভবানন্দ) এবং সুধীর সরকারের স্মৃতি অনুযায়ী তাঁরা কোনো মিশনে যাওয়ার আগে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিনোদবালার আশীর্বাদ নিতেন। ভিক্টোরিয়া স্কুলে রবীন্দ্রনাথ, রাজনারায়ণ বসু এবং কেশবচন্দ্রের বাড়ির মেয়েরা বিনোদবালার সহপাঠী ছিলেন। এই উচ্চসংসর্গে বিনোদবালা তাঁর মধ্যেকার সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে পেরেছিলেন। স্বর্ণকুমারী দেবীর সখী সমিতির তিনি সভ্য ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজ যেমন বিধবাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি দেখতেন। বিধবাদের জন্য তিনি সরোজনলিনী আবাস চালু করেন এবং দুঃস্থ নারীদের হাতেকলমে শিক্ষার জন্য হিরণ্ময়ী প্রকল্প বলে একটি প্রতিষ্ঠান চালাতেন। তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগরের কারমাইকেল স্কুলের শিক্ষিকা। বাঘা যতীন চূড়ান্ত আত্মাহুতি দেওয়ার পর তিনি তাঁর ভাইয়ের সংসার চালাতেন। তিনি ছিলেন সবার বড়দি এবং ছোট ছেলেমেয়েদের ভালোবাসার পিসীমা। তাঁর নাতি-নাতনিরাও তাঁকে বড়দি বলেই ডাকতো।  তাদের প্রতি ছিল তাঁর একদিকে কড়া শাসন এবং অপরদিকে অকুন্ঠ ভালোবাসা। নিজের ভাই বাঘা যতীনের কাজের বর্ণনা করতে গিয়ে পরবর্তী কালে তাঁর চোখ জলে ভরলেও মুখে লেগে থাকতো গর্বের হাসি। সমস্ত সাল তারিখ সমেত প্রিয় ভাইয়ের জীবনের ঘটনাবলী তিনি লিখে রাখতেন যাতে পরবর্তীকালে কেউ সেখান থেকে ইতিহাস রচনা করতে পারেন। যুগান্তর নেতা অরুণচন্দ্র গুহ তাঁর বই First Spark of Revolution-এ একটি পরিচ্ছেদে বিনোদবালার অসাধারণ আত্মত্যাগের কথা লিখেছেন। প্রফেসর শৈলেন ঘোষ তাঁর বইতে যতীনের ধর্মপত্নী ইন্দুবালা দেবীর অসামান্য সংযম, ত্যাগ ও স্বামীর কর্মের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থনের সম্বন্ধে লিখেছেন। 

মহিলা বিপ্লবীদের মধ্যে এ-সময়ে অগ্রগণ্য ছিলেন ননীবালা দেবী যিনি পিসীমা নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। জেলবন্দী রামচন্দ্র মজুমদারের স্বামী পরিচয় দিয়ে তিনি তাঁর মাউজার (Mauser) পিস্তলের লুকোনো জায়গা জেনে এসেছিলেন।  বিপ্লবীদের তিনি নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন - চন্দননগরে তাঁদের আশ্রয় দিয়ে, তাঁদের নিজের নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় দিয়ে যাতে তাঁরা বাড়ি ভাড়া পেতে পারেন। পেশোয়ারে তিনি ধরা পড়েন এবং তাঁর ওপরে অকথ্য অত্যাচার হয়। টেগার্টের নির্দ্দেশে তাঁর গোপন অঙ্গে লঙ্কাবাটা ঢোকানো হয়েছিলো। অসমসাহসী পিসীমা পুলিশের বড়ো কর্তা গোল্ডিকে (Goldie) মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য চড় মেরেছিলেন। আরেকজন অসাধারণ শৌর্যশালিনী মহিলা বিপ্লবী ছিলেন সিন্ধুবালা দেবী যিনি পরে পুলিশের গুলিতে মারা যান। 
 

bottom of page